বুদ্ধদেব বসু 
নদী-স্বপ্ন 
 
কোথায় চলেছো? এদিকে এসো না! দুটো কথা শোনা দিকি  
এই নাও- এই চকচকে ছোটো, নুতন রূপোর সিকি  
ছোকানুর কাছে দুটো আনি আছে, তোমারে দেবো গো তা-ও,  
আমাদের যদি তোমার সঙ্গে নৌকায় তুলে নাও।  
নৌকা তোমার ঘাটে বাঁধা আছে- যাবে কি অনেক দূরে?  
পায়ে পড়ি, মাঝি, সাথে নিয়ে চলো মোরে আর ছোকানুরে  
আমারে চেনো না? মোর নাম খোকা, ছোকানু আমার বোন  
তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা মেঘনা-পদ্মা-শোন।  
 
দিদি মোরে ডাকে গোবিন্দচাঁদ, মা ডাকে চাঁদের আলো,  
মাথা খাও, মাঝি, কথা রাখো! তুমি লক্ষী, মিষ্টি, ভালো!  
বাবা বলেছেন, বড় হয়ে আমি হব বাঙলার লাট,  
তখন তোমাকে দিয়ে দেব মোর ছেলেবেলাকার খাট।  
 
চুপি-চুপি বলি, ঘুমিয়ে আছে মা, দিদি গেছে ইস্কুলে,  
এই ফাঁকে মোরে-আর ছোকানুরে- নৌকোয়া লও তুলে।  
কোন ভয় নেই – বাবার বকুনি তোমাকে হবে না খেতে  
যত দোষ সব, আমার- না, আমি একা ল'ব মাথা পেতে।  
 
নৌকো তোমার ডুবে যাবে নাকো, মোরা বেশি ভারি নই,  
কিচ্ছু জিনিস নেবো না সঙ্গে কেবল ঝন্টু বই।  
চমকালে কেন! ঝন্টু পুতুল, ঝন্টু মানুষ নয়,  
একা ফেলে গেলে, ছোকানুরে ভেবে কাঁদিবে নিশ্চয়।  
 
অনেক রঙের পাল আছে, মাঝি? বাদামী? সোনালী? লাল?  
সবুজও? তা হলে সেটা দাও আজ, সোনালীটা দিয়ো কাল।  
সবগুলো নদী দেখাবে কিন্তু। আগে চলো পদ্মায়,  
দুপুরের রোদে রূপো ঝলমল সাদা জল উছলায়  
শুয়ে' শুয়ে' - মোরা দেখিব আকাশ- আকাশ ম-স্ত বড়,  
পৃথিবীর যত নীল রঙ- সব সেখানে করেছে জড়।  
মায়ের পূজোর ঘরটির মত, একটু ময়লা নাই,  
আকাশেরে কে যে ধোয় বারবার, তুমি কি জানো তা ভাই?  
 
কালো-কালো পাখি বাঁকা ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলে যায় দূরে,  
উঁচু থেকে ওরা দেখিতে কি পায় মোরে আর ছোকানুরে?  
রূপোর নদীতে রূপোর ইলিশ- চোখ ঝলসানো আঁশ,  
ওখানে দ্যাখো না- জালে বেঁধে জেলে তুলিয়াছে একরাশ।  
 
ওটা চর বুঝি? একটু রাখো না, এ তো ভারি সুন্দর।  
এ যেন নতুন কার্পেট বোনা! এই পদ্মার চর?  
ছোকানু, চল রে, চান ক'রে আসি দিয়ে সাত-শোটা ডুব,  
ঝাঁপায়ে-দাপায়ে টলটলে জলে নাইতে ফুর্তি খুব।  
ইলিশ কিনলে? আঃ, বেশ বে তুমি খুব ভালো, মাঝি  
উনুন ধরাও ছোকানু দেখাবে রান্নার কারসাজি।  
খাওয়া হ'লো শেষ- আবার চলেছি, দুলছে ছোট্ট নাও,  
হাল্কা নরম হাওয়ায় তোমার লাল পাল তুলে দাও।  
আমর দু'জন দেখি ব'সে ব'সে আকাশ কত না নীল,  
ছোট পাখি আরো ছোট হ'য়ে যায়- আকাশের মুখে তিল  
সারাদিন গোলা, সূর্য লুকালো জলের তলার ঘরে,  
সোনা হ'য়ে জ্বলে পদ্মার জল কালো হ'লো তার পরে।  
 
সন্ধ্যার বুকে তারা ফুটে ওঠে- এবার নামাও পাল  
গান ধরো, মাঝি; জলের শব্দ ঝুপঝুপ দেবে তাল।  
ছোকানুর চোখ ঘুমে ঢুলে আসে- আমি ঠিক জেগে আছি,  
গান গাওয়া হ'লে আমায় অনেক গল্প বলবে, মাঝি?  
শুনতে-শুনতে আমিও ঘুমাই বিছানা বালিশ বিনা-  
মাঝি, তুমি দেখো ছোকানুরে, ভাই, ও বড়োই ভীতু কিনা  
আমার জন্য কিচ্ছু ভেবো না, আমিই তো বড়োই প্রায়,  
ঝড় এলে ডেকো আমারে- ছোকানু যেন সুখে ঘুম যায়।                         
                        Answered by 
                            AL MaMun                            (4 Golds)
                            
                                Monday, 18 Feb 2019, 10:06 AM                            
                            
                            
                        
                        
                        
                        
                     |